1. admin@thetimesnewsbd.com : admin : M. Lutfar Rahman
  2. rahmansakib257@gmail.com : Lutfar Rahman : Lutfar Rahman
  3. payel.itcs@gmail.com : Mahmudur Rahman Payel : Mahmudur Rahman Payel
বৃহস্পতিবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৫, ০১:৪১ অপরাহ্ন

মাল্টিভার্স: অনন্ত মহাবিশ্বের সন্ধানে

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২৩
  • ৪৬ দেখেছেন

দ্য টাইমস নিউজ বিডি ডেস্ক : আমাদের চেনা মহাবিশ্ব যে কত বিশাল সেটা ভাবলে বিস্মিত হতে হয়। হাবল স্পেস টেলিস্কোপ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করে এ পর্যন্ত প্রায় দুই গ্যালাক্সির সন্ধান পাওয়া গেছে। অনেক বিজ্ঞানী মনে করেন, এ সংখ্যাটি আরো অনেক গুন বেশি হতে পারে। ভবিষ্যতে আরও শক্তিশালী টেলিস্কোপ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করলে এর চেয়েও অনেক বেশী গ্যালাক্সির সন্ধান পাওয়া যাবে বলে তাঁদের ধারণা।

প্রসঙ্গত বলে রাখি, ২০২১ সালের শেষ দিকে মহাশূন্যে জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ পাঠানো হয়েছে। এটি হাবল স্পেস টেলিস্কোপের চেয়েও একশ গুণ বেশি শক্তিশালী। বলাই বাহুল্য, এই টেলিস্কোপের মাধ্যমে আমাদের চেনা মহাবিশ্বের পরিধি আরো অনেক বেড়ে যাবে।
এত অসংখ্য গ্যালাক্সির মাঝে একটি অতি সাধারণ গ্যালাক্সি হলো আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি।

বাংলায় একে বলে, আকাশ-গঙ্গা ছায়াপথ। এটি আমাদের আবাসস্থল। আমাদের এই নিজস্ব গ্যালাক্সিটিতে ১০০ বিলিয়ন নক্ষত্র রয়েছে। সূর্য হলো তারই মধ্যে একটি অতি সাধারন মাঝারি সাইজের নক্ষত্র।

এই নক্ষত্রটিকেই কেন্দ্র করে প্রদক্ষিণ করছে আমাদের সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা পৃথিবী। সূর্যের আটটি গ্রহের একটি হলো আমাদের পৃথিবী। গ্রহটি আকারে আহামরি এমন কিছু বড় নয়। হিসেব করে দেখা গেছে, পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্বে এক বিলিয়ন ট্রিলিয়ন (একের পিঠে বাইশটি শুন্য দিলে যা হয়) নক্ষত্র রয়েছে। সংখ্যাটি যে অত্যন্ত বিশাল সেটা বলাই বাহুল্য।

অনেকে বলেন, পৃথিবীর সমস্ত সমুদ্র সৈকতে যে পরিমাণ বালুকণা রয়েছে, মহাবিশ্বে তার চেয়েও অনেক বেশি নক্ষত্র রয়েছে। এই বিশাল মহাবিশ্বে আমাদের পৃথিবীর অবস্থান যে অতি অকিঞ্চিৎকর সে ব্যাপারে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। বিশাল এই মহাবিশ্বের তুলনায় আমাদের অবস্থান অতি তুচ্ছ এবং নগণ্য।

এখন থেকে মাত্র একশো বছর আগেও মহাবিশ্ব বলতে বিজ্ঞানীরা শুধুমাত্র মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিকেই বুঝতেন। এর বাইরে যে এতো অসংখ্য গ্যালাক্সি রয়েছে সে সম্বন্ধে বিজ্ঞানীদের কোন ধারণাই ছিল না। তাঁরা দূরবর্তী গ্যালাক্সিগুলোকে মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির অন্তর্গত নীহারিকা (Nebula) মনে করতেন। ১৯২৩ সালে নিবিড় পর্যবেক্ষণের ফলে সর্বপ্রথম প্রমাণিত হয়, অ্যানড্রোমিডা (Andromeda) কোন নেবুলা বা নীহারিকা নয়, এটি মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির বাইরে একটি স্বতন্ত্র গ্যালাক্সি। পৃথিবী থেকে এর দূরত্ব হলো ২.৫ মিলিয়ন আলোকবর্ষ। তার মানে হলো, এই গ্যালাক্সিটি থেকে পৃথিবীতে আলো এসে পৌঁছাতে সময় লাগে ২.৫ মিলিয়ন বছর। কিন্তু মহাজাগতিক স্কেলে অ্যানড্রোমিডা গ্যালাক্সিটি আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির একটি অতি নিকট প্রতিবেশী।

টেলিস্কোপ প্রযুক্তিতে অভাবনীয় উন্নতি হওয়ার ফলে ক্রমান্বয়ে আরও অসংখ্য গ্যালাক্সি আবিষ্কৃত হয়েছে। এসব গ্যালাক্সি থেকে পাওয়া আলোক রশ্মির বর্ণালী বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা দেখতে পাচ্ছেন, গ্যালাক্সিগুলো খুব দ্রুতই পরস্পরের কাছ থেকে ক্রমাগত দূরে সরে যাচ্ছে। এর ফলে বোঝা যাচ্ছে মহাবিশ্ব মোটেই স্থির নয়। বরং সময়ের সাথে সাথে মহাবিশ্ব ক্রমেই প্রসারিত হচ্ছে। তার মানে হলো, আমরা যদি সময়ের বিপরীতে সুদূর অতীতে ফিরে যাই, তাহলে একসময় দেখতে পাবো, সমস্ত গ্যালাক্সির যাবতীয় বস্তু একটি নির্দিষ্ট বিন্দুতে কেন্দ্রীভূত অবস্থায় ছিলো। এর পেছনে ফিরে যাওয়ার আর কোন উপায় নেই। সময় এখানে এসে থেমে গেছে। এই অবস্থাকে বলা হয় সিঙ্গুলারিটি।

বিজ্ঞানীরা মনে করেন, এই সিঙ্গুলারিটির ভেতরে স্থান, কাল, বস্তু এবং শক্তি সবই একীভূত অবস্থায় ছিল। এখান থেকেই মহাবিশ্বের সূচনা হয়েছে। বিজ্ঞানীরা হিসাব করে দেখেছেন, এখন থেকে প্রায় ১৩.৮ বিলিয়ন বছর আগে, এই সিঙ্গুলারিটির ভেতর একটি ঘটনা ঘটেছিলো। এর নাম হলো বিগ ব্যাং (Big Bang)। যদিও নাম শুনে মনে হচ্ছে, এটি ছিলো একটি মহাবিস্ফোরণ, কিন্তু আসলে এটি কোন সাধারণ বিস্ফোরণ ছিল না।

এটি ছিলো একটি রূপান্তর প্রক্রিয়া, যার ফলে মহাবিশ্বে স্থান-কাল এবং বস্তুর সৃষ্টি হয়েছিলো। বিগ ব্যাং সম্বন্ধে বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত হয়েছেন, এক ধরনের মহাজাগতিক বিকিরণ থেকে। এর নাম হলো, কসমিক মাইক্রোওয়েভ ব্যাকগ্রাউন্ড (CMB)। বিগ ব্যাংয়ের ফলে উদ্ভূত এই মাইক্রোওয়েভ বিকিরণ মহাবিশ্বের সবদিকে সমভাবে ছড়িয়ে আছে। ১৯৬৪ সালে দুজন মার্কিন রেডিও প্রকৌশলী আকস্মিকভাবেই তাঁদের স্থাপিত এন্টেনায় এই বিকিরণটি আবিষ্কার করেছিলেন। মজার ব্যাপার হলো, আগেকার যুগে এনালগ টেলিভিশনে চ্যানেল না থাকলে যে ঝিরঝির ছবি এবং শিরশির শব্দ হতো, সেটার উৎসের কিছুটা হলো এই কসমিক মাইক্রোওয়েভ ব্যাকগ্রাউন্ড।

বিজ্ঞানীরা মনে করেন, বিগ ব্যাংয়ের নির্গত শক্তি থেকেই ধাপে ধাপে মহাবিশ্বের যাবতীয় বস্তুকণার সৃষ্টি হয়েছে। তাদের মতে বিগ ব্যাংয়ের পর প্রথম তিনটি মিনিট ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মহাবিশ্বের যাবতীয় প্রাথমিক বস্তুকণা এই প্রথম তিন মিনিটের মধ্যেই সৃষ্টি হয়েছিলো। বিগ ব্যাংয়ের মহাশক্তি থেকে প্রাথমিক বস্তুকণার রূপান্তর কিভাবে হয়েছিল তার ব্যাখ্যা তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানীরা দিয়েছেন। তাঁরা বলেন, এর ফলে অতি উচ্চ তাপমাত্রায় প্রচন্ড শক্তি নির্গত হয়েছিলো। এক হাজার ট্রিলিয়ন ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার এই মহাশক্তি থেকে খুব দ্রুতই কিছু প্রাথমিক বস্তুকণার উদ্ভব হয় যা প্রথম তিন মিনিটের মধ্যেই কয়েক ধাপে হাইড্রোজেন এবং হিলিয়াম পরমাণুতে রূপান্তরিত হয়েছিলো। আইনস্টাইন তাঁর বিখ্যাত ভর-শক্তির সমীকরণে (E = mc2) দেখিয়েছেন, বস্তুকে যেমন শক্তিতে রূপান্তরিত করা সম্ভব, তেমনি শক্তিকেও বস্তুতে রূপান্তরিত করা অসম্ভব নয়। মহাবিশ্বের সূচনায় এই অসম্ভবটিই সম্ভব হয়েছিলো। এর পরপরই মহাবিশ্বের প্রসারণ শুরু হয়, যা এখনো ক্রমেই প্রসারিত হয়েই চলেছে। পরবর্তীতে হাইড্রোজেন এবং হিলিয়াম পরমাণু মহাকর্ষের ফলে পুঞ্জীভূত হয়ে বিভিন্ন গ্যালাক্সি, নেবুলা এবং নক্ষত্রের জন্ম দিয়েছে। এগুলো এখন আমাদের পরিচিত মহাবিশ্বের অংশ। বিগ ব্যাং হলো বিজ্ঞানীদের কাছে মহাবিশ্ব সৃষ্টির সবচাইতে পছন্দনীয় এবং গ্রহণযোগ্য মডেল।

বিজ্ঞানে শেষ কথা বলে কিছু নেই। বেশ কিছু তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী আছেন, যারা মনে করেন, আমাদের চেনা মহাবিশ্বই শেষ কথা নয়। এর বাইরেও রয়েছে অসংখ্য অচেনা মহাবিশ্ব। এই অনন্ত মহাবিশ্বের নাম তাঁরা দিয়েছেন, মাল্টিভার্স (Multiverse)। এসব অচেনা মহাবিশ্বগুলো আমাদের চেনা মহাবিশ্বের সমান্তরাল কিন্তু এদের প্রাকৃতিক নিয়মকানুনগুলো আমাদের চেনা মহাবিশ্বের মত নয়, সম্পূর্ণ আলাদা। অনেকে একে বলেন, প্যারালাল ইউনিভার্স। একে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী মনে হতে পারে। কিন্তু বিজ্ঞান কোন কোন সময় কল্পকাহিনীকেও হার মানিয়ে দেয়। বর্তমান যুগের কসমোলজিতে মাল্টিভার্স তত্ত্ব এমনি এক আশ্চর্য বিষয়।

এ নিয়ে আলোচনা করার আগে কোয়ান্টাম মেকানিক্স নিয়ে একটু কথা বলা দরকার। আমরা জানি, পদার্থের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণাদের জগৎটি বড়ই বিস্ময়কর এবং অদ্ভুত। এই জগতের নিয়ামক হলো কোয়ান্টাম মেকানিক্স। চিরায়ত পদার্থবিজ্ঞানে বিজ্ঞানের সাধারণ নিয়মগুলো এখানে খাটে না। কোয়ান্টাম মেকানিক্সের নিয়ম অনুসারে কোন বস্তুকণার অবস্থান নিশ্চিত ভাবে নির্ণয় করা সম্ভব নয়। মোদ্দা কথা হলো, কোয়ান্টাম জগতে একটি বস্তুকণা একই সময়ে একাধিক অবস্থানে থাকতে পারে। কোয়ান্টাম বস্তুকণার এই বৈশিষ্ট্যকে বলা হয়, সুপারপজিশন। বস্তুকণার ভিন্ন ভিন্ন কোয়ান্টাম অবস্থান আমরা একই সাথে পর্যবেক্ষণ করতে পারিনা। যেমন একটি বস্তুকণা একটি নির্দিষ্ট সময়ে কণা হিসেবে থাকতে পারে, আবার তরঙ্গ হিসেবেও থাকতে পারে। কিন্তু একই সাথে আমরা কখনও এ দুটো অবস্থান দেখতে পাই না। বস্তুকণার কোয়ান্টাম অবস্থান নির্ণয় করতে হয় এর সম্ভাব্যতা বা প্রবাবিলিটি দিয়ে। আলবার্ট আইনস্টাইন অবশ্য কোয়ান্টাম মেকানিক্সের এই বিষয়টি নিয়ে অস্বস্তিতে ছিলেন। তিনি সরাসরি বলেছিলেন, ‘ঈশ্বর মহাবিশ্বকে নিয়ে পাশা খেলেন না। বলাই বাহুল্য তাঁর কাছে ‘সম্ভাব্যতা’ ব্যাপারটা খুব গোলমেলে ঠেকেছিল।

কোয়ান্টাম মেকানিক্সের একজন দিকপাল ছিলেন অস্ট্রিয়ান পদার্থবিজ্ঞানী আরউইন শ্রোডিঙ্গার। ১৯২৬ সালে শ্রোডিঙ্গারই সর্বপ্রথম তাঁর ওয়েভ ফাংশন সমীকরণের সাহায্যে বস্তুকণার কোয়ান্টাম অবস্থানের সম্ভাব্যতা নির্ণয় করেছিলেন। কিন্তু আমরা যখনই কোনো বস্তুকণাকে পর্যবেক্ষণ করি তখনই তার কোয়ান্টাম ওয়েভ ফাংশনের পরিসমাপ্তি ঘটে। শ্রোডিঙ্গার বুঝতে পেরেছিলেন, আমাদের পারিপার্শ্বিক দৃশ্যমান জগতে কোয়ান্টাম মেকানিক্সের নিয়মগুলি প্রয়োগ করলে সমস্যা দেখা যাবে। তিনি বিড়াল নিয়ে একটি কাল্পনিক পরীক্ষার মাধ্যমে এটি জনসম্মুখে তুলে ধরেছিলেন। এই কাল্পনিক পরীক্ষার মাধ্যমে তিনি দেখিয়েছিলেন একটি বন্ধ বাক্সের মধ্যে একটি বিড়ালের পক্ষে কোয়ান্টাম জগতে জীবিত এবং মৃত দুই অবস্থায়ই থাকা সম্ভব। যেটি বাস্তবে অসম্ভব। শ্রোডিঙ্গার বিড়াল নিয়ে তাঁর এই কাল্পনিক পরীক্ষার মাধ্যমে এটাই বোঝাতে চেয়েছিলেন, বস্তুকণাদের জগতে সুপারপজিশনের ধারণাটি প্রয়োগ করা গেলেও, আমাদের দৃশ্যমান পারিপার্শ্বিক জগতে এর প্রয়োগ বাস্তবসম্মত নয়। এই দুই জগতের নিয়ম বড়ই আলাদা।

কোয়ান্টাম মেকানিক্সে অবশ্য আরও গোলমেলে ব্যাপার-স্যাপার রয়েছে। যেমন ধরুন, কোয়ান্টাম মেকানিক্সে এনট্যাঙ্গলমেন্ট বলে একটি ব্যাপার আছে। সোজা বাংলায় এর মানে হলো, পরস্পর জড়িয়ে থাকা। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, প্রকৃতিতে দুটি বস্তুকণার উদ্ভব এমনভাবে হতে পারে, যেখানে একটি বস্তুকণার কোয়ান্টাম চরিত্র ব্যাখ্যা করলে অন্য বস্তু কণাটির কোয়ান্টাম চরিত্রও জানা যায়। যদিও আপাতদৃষ্টিতে দুটি বস্তুকণার মধ্যে সরাসরি কোন যোগাযোগ নেই এবং তাদের মধ্যে অনেক দূরত্বও রয়েছে। কিন্তু কোন এক অদৃশ্য বন্ধনে কোয়ান্টাম জগতের একটি বস্তুকণা অন্য একটি দূরবর্তী বস্তুকণার সাথে জড়িয়ে থাকতে পারে। কোয়ান্টাম মেকানিক্সের পরিভাষায় একে বলা হয় এনট্যান্ঙ্গেলমেন্ট। আইনস্টাইন একে বলেছিলেন, স্পুকি অ্যাকশন অ্যাট ডিসটেন্স; এটা অনেকটা ভুতুড়ে ব্যাপারের মত। এখানে কোয়ান্টাম মেকানিক্সের সাথে পদার্থবিজ্ঞানের সাধারণ নিয়মাবলীর পার্থক্য দেখা যায়।

বিজ্ঞানীরা বস্তুকণার চরিত্র নিয়ে যতই গবেষণা করেছেন তাদের কাছে কোয়ান্টাম কণাদের অনিশ্চয়তার এবং জড়িয়ে থাকার বিষয়টি ততই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। কোয়ান্টাম জগতের বস্তুকণাদের এই অদ্ভুত আচরণের ব্যাখ্যা বিজ্ঞানীরা নানাভাবে দিয়েছেন। তবে এর সবচেয়ে আশ্চর্যজনক ব্যাখ্যাটি দিয়েছেন, হিউ এভারেট নামে প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির একজন গবেষক। ১৯৫৩ সালে তিনি বলেছিলেন, কোয়ান্টাম কণাদের এই দ্বৈত আচরণ আসলে ঘটছে দুটো ভিন্ন মহাবিশ্বে। পর্যবেক্ষক দুটো ভিন্ন মহাবিশ্ব থেকে একে আলাদাভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। সেজন্য আমরা একই সাথে বস্তুকণার দুটো অবস্থা দেখতে পাই না। দুটি ভিন্ন মহাবিশ্বে কোয়ান্টাম বস্তুকণারা পরস্পরের সাথে যুক্ত থাকলেও, দৃশ্যমান জগতে পর্যবেক্ষক পরস্পরের সাথে সংযুক্ত নয়। তাঁর এই বহু জাগতিক (multi-world) ব্যাখ্যাটি সে যুগের পদার্থবিজ্ঞানীদের কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হয়নি। কিন্তু পরবর্তীতে এ ব্যাপারে বিজ্ঞানীদের মাঝে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে।

বর্তমান যুগের একদল তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী কোয়ান্টাম মেকানিক্সের নিয়মকে মহাবিশ্ব সৃষ্টির তত্ত্বের সাথে একীভূত করে মাল্টিভার্স বা অনন্ত মহাবিশ্বের ধারণাটি দিয়েছেন। আগেই বলেছি একটি বিগ ব্যাংয়ের মাধ্যমে মহাবিশ্বের সূচনা হয়েছিলো। কিন্তু বিগ ব্যাং কেন হয়েছিলো সে ব্যাপারটি বিজ্ঞানীদের কাছে এখনও স্পষ্ট নয়। এ নিয়ে নানা মুনির নানা মত রয়েছে।

অনেক বিজ্ঞানী মনে করেন, বিগব্যাংয়ের ঠিক পরপরই মহাবিশ্ব ব্যাপক হারে স্ফীত (inflation) উঠেছিলো। এর কারণ হিসেবে তারা চিহ্নিত করেছেন মহাকর্ষ বলকে। যদিও আমরা জানি মহাকর্ষ বল হলো আকর্ষণধর্মী, কিন্তু বিগব্যাংয়ের পরপরই প্রচন্ড শক্তির প্রভাবে মহাকর্ষ বল বিকর্ষণধর্মী হয়ে গিয়েছিল। এই বিকর্ষণধর্মী মহাকর্ষ বলের প্রভাবে মহাবিশ্ব অতি দ্রুত হারে স্ফীত হতে শুরু করে। বিজ্ঞানীদের হিসেবে, জ্যামিতিক হারে এই ব্যাপক স্ফীতিটি হয়েছিলো বিগব্যাং ঘটার ১০-৩৭ থেকে ১০-৩৫ সেকেন্ডের মধ্যে। এই অতি সামান্য সময়ের মধ্যেই মহাবিশ্বের আয়তন জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি পায়। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, অতি সামান্য সময়ে এই অতি দ্রুত স্ফীতির হার সর্বত্র সুষম ছিলনা। সেজন্য স্ফীতি কালীন সময়ে বুদবুদের মত অসংখ্য বলয় সৃষ্টি হয়েছিলো। এই বলয়গুলোই পরবর্তীতে ভিন্ন ভিন্ন মহাবিশ্ব হিসেবে রূপান্তরিত হয়েছে। এর ফলে একটি বিগ ব্যাং থেকেই একটির পরিবর্তে অনন্ত মহাবিশ্বের সৃষ্টি হয়েছে। এসব মহাবিশ্বগুলো একে অপরের কাছে দৃশ্যমান নয়। এদের প্রাকৃতিক নিয়মগুলোও ভিন্ন। কিন্তু কোয়ান্টাম জগতের বস্তুকণার মতই এই মহাবিশ্বগুলো সমান্তরালভাবে বিরাজমান। তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানীরা অনন্ত মহাবিশ্বের সংখ্যাও হিসেব করে বের করেছেন। সংখ্যাটি হলো (১০১০)১৬। বলাই বাহুল্য, সংখ্যাটি অবিশ্বাস্য রকমের বড়। অনন্ত মহাবিশ্ব যে কত বিশাল সেটা ক্ষুদ্র মানুষের পক্ষে ধারণা করাটি অত্যন্ত কঠিন।

বর্তমান যুগের তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানীদের প্রস্তাবিত স্ট্রিং থিওরি অনুযায়ী আমাদের দৃশ্যমান ত্রিমাত্রিক জগৎটাই সবকিছু নয়, এর বাইরেও জগত রয়েছে। স্ট্রিং থিওরী মোতাবেক মহাবিশ্বে মোট এগারোটি ডাইমেনশন রয়েছে। দৈর্ঘ্য প্রস্থ এবং উচ্চতা, এই তিনটি দৃশ্যমান স্থানিক মাত্রার অতিরিক্ত মাত্রাগুলোকে বলা হয় হাইপারস্পেইস (Hyperspace)। এই উচ্চমাত্রার স্থানগুলো রয়েছে আমাদের ধরাছোঁয়া বা দৃষ্টিসীমার বাইরে। সেজন্য বলা যায়, স্ট্রিং থিওরী অনুযায়ী মাল্টিভার্স বা প্যারালাল ইউনিভার্সের ধারনাটি অমূলক নয়। তবে আমাদের পর্যবেক্ষণের সীমাবদ্ধতার জন্য একে প্রমাণ করাও সম্ভব নয়।

আপনি যখন এই লেখাটি পড়ছেন, তখনই হয়তো অন্য কোন সমান্তরাল মহাবিশ্বে আপনারই মত একজন এই লেখাটি পড়ে আপনারই মতন মুচকি মুচকি হাসছেন। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো তার সাথে আপনার কোনদিনই দেখা হবে না। সেজন্যই হয়তো মরমী কবি লালন ফকির বলেছেন, ‘বাড়ির কাছে আরশি নগর, সেথা এক পড়শি বসত করে, আমি একদিনও না দেখিলাম তারে’।

শুরুতেই বলেছি মহাবিশ্বের তুলনায় আমাদের পৃথিবী নামক গ্রহটি অত্যন্ত অকিঞ্চিৎকর। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, এই ক্ষুদ্র গ্রহটিতে মানুষ নামে একটি আশ্চর্য প্রাণী বাস করে, সে তার মস্তিষ্কের মেধা ও মননকে কাজে লাগিয়ে অনন্ত বিশাল মহাবিশ্বের সমস্ত রহস্যকে খুঁজে বের করার দুরূহ প্রচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। মানুষের পক্ষে মহাবিশ্বের সমস্ত রহস্যকে জানা সম্ভব কিনা তা নিয়ে অবশ্য প্রশ্নের অবকাশ রয়েছে। এ কাজে মানুষ সফল হবে কিনা সেটা একমাত্র ভবিষ্যতই বলতে পারে।

সূত্র: সায়েন্টিফিক অ্যামেরিকান-পিএনএস

দ্য টাইমস নিউজ বিডি

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই জাতীয় আরো সংবাদ..
এই সংস্থা্র ওয়েব সাইটে প্রকাশিত যে কোন সংবাদ (The World Times Bd) এর যথাযথ তথ্যসূত্র (রেফারেন্স) উল্লেখ পূর্বক যে কেউ ব্যবহার বা প্রকাশ করতে পারবেন। দ্য ওয়ার্ল্ড টাইমস বিডি ।
Theme Customized BY Themes Seller.Com.Bd