দ্য টাইমস নিউজ বিডি ডেস্ক: বছর তিনেক আগে ক্রিকইনফোর ‘ক্রিকেট মান্থলি’র মার্চ সংখ্যায় কুইন্টন ডি কককে নিয়ে একটা স্পেশাল ফিচার প্রকাশিত হয়েছিল। ‘দ্য ইপোর্টলেস জিনিয়াস অব কুইন্টন ডি কক’ স্টোরিটির শিরোনাম ছিল এমন। লেখক ড্যানিয়েল গ্যালান সেই লেখনীতে এক রাজকুমারের ক্রিকেটের গল্পটা তুলে এনেছেন দারুণ সব তথ্য-উপাত্ত দিয়ে।
যেখানে নিজের ক্রিকেটবিদ্যা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে খানিকটা অবাকই হন ডি কক। তাঁর কথার ভাঁজেও তেমন ছাপ স্পষ্ট হয়ে ওঠে, ‘দেখুন, কোনো স্কুল থেকে আমাকে স্নাতক ডিগ্রি নিতে হয়নি। তবে ক্রিকেটের ওপর আমার মাস্টার্স করা আছে, তাতেই চলবে।’
হ্যাঁ, ইংরেজি সাহিত্যের গ্রামারের নিয়ম না-ই জানতে পারেন ডি কক। কিন্তু ক্রিকেটের সব গ্রামারই তাঁর ঠোটস্থ। পুরো ক্যারিয়ারে সেসব নিয়ম দিয়েই প্রতিপক্ষকে বেকায়দায় ফেলেছেন। রেকর্ড, রান কিংবা ব্যক্তিগত প্রাপ্তি– সবই তাঁর ঝুলিতে জমা, কেবল একটাই শূন্যতা। সেটা যে আরাধ্যের ট্রফির।
দীর্ঘ এই পথচলায় বারবার হোঁচট খেয়ে আবার ঘুরে দাঁড়িয়েও ট্রফিটা হাতে নেওয়া হয়নি। সব শেষ ভারতের মাটিতে নিজের শেষ বিশ্বকাপ এমনকি ওয়ানডের শেষ ম্যাচটিও খেলে ফেললেন ডি কক। তবু ফাঁকাই রয়ে গেল সেই ঘর।
১৯৯২ সালে জোহানেসবার্গের ট্রান্সভাল রাজ্যে জন্ম ডি ককের। শৈশবেই ক্রিকেটের প্রতি ভালো লাগা শুরু তাঁর। ব্যাট হাতে পাড়ার ছেলেদের সঙ্গে নিয়ে দিনের বড় একটা অংশ খেলার আনন্দে থাকতেন। যখন শহরের নামকরা স্কুল কিং এডওয়ার্ডে ডি কককে ভর্তি করিয়ে দেন তাঁর বাবা। তখন তাঁর খেলাধুলায় খানিকটা ভাটা পড়ে। পড়াশোনার চাপ সামলে আগের মতো দলবেঁধে ক্রিকেট টিম গড়া হচ্ছিল না। এর মাঝে স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়ায় নাম দিয়ে দেখান চমক। তার পর থেকে স্কুল ছুটির পর সেখানেই সময় ধরে কিছুক্ষণ ক্রিকেট চালিয়ে যেতেন।
ধীরে ধীরে রাজ্যের সীমানা ছাড়িয়ে ডি ককের ক্রিকেট প্রতিভার কথা চলে যায় দক্ষিণ আফ্রিকার টিম ম্যানেজমেন্টের কানে। ২০১২ সালের দিকে দেশটির বয়সভিত্তিক টিমে খেলার জন্য ডাক পড়ে তাঁর। সে বছরই আবার অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ডে বসে অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপের ১৬তম আসর। সেই আসরে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রতিনিধি হয়ে তিনিও যান খেলতে। আর যাত্রা ম্যাচেই দেখান ঝলক। বাংলাদেশের সঙ্গে ৯৫ রানের ইনিংস খেলেন ডি কক। এরপর নাবিবিয়ার সঙ্গে করেন ১২৬।
আর পেছনে তাকাতে হয়নি তাঁকে। তরতর করে এগিয়ে যান। ওই বছরের ডিসেম্বরেই জাতীয় দলের দুয়ার তাঁর জন্য খুলে দেন নির্বাচকরা। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ডারবানে টি২০ দিয়ে শুরু হয় ডি ককের আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আসা। পরের বছর একই দলের বিপক্ষে ওয়ানডে অভিষেকও হয়ে যায়। এর পর টেস্ট। আর কোথায় ফুলস্টপ দিতে হয়নি তাঁকে।
অল্প দিনে দর্শকদের মন জয় করে নেন ডি কক। নান্দনিক কাভার ড্রাইভ, নিখুঁত স্কয়ার কাট, আর সলিড লেট কাটে সবাইকে করেন মুগ্ধ। লেগসাইডের ওপর দিয়ে তাঁর বাউন্ডারি হাঁকানোর যে দক্ষতা, সেটা এই সময়ে খুব কম ক্রিকেটারের আছে।
শিরোপার নাগাল না পেলেও এমন অনেক কীর্তির জন্য ডি কক হয়ে থাকবেন অমর। ৫০ ওভারের ক্রিকেটে তাঁর এমন অনেক ম্যাজিক্যাল শট দর্শকরা মিস করলেও এক ক্যারিয়ারে যতটুকু বিনোদন দিয়েছেন তিনি, সেটাও বা কম কিসে!-পিএনএস
দ্য টাইমস নিউজ বিডি