দ্য টাইমস নিউজ বিডি ডেস্ক: ২০২৬ সালের ফিফা বিশ্বকাপ আয়োজনের আর মাত্র এক বছর বাকি। এবার ফুটবলের সবচেয়ে বড় আসর বসছে উত্তর আমেরিকায়—যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকো মিলিয়ে।
আয়োজক দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় দায়িত্ব বহন করছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে নিজেদের প্রস্তুতি নিয়ে গভীর শঙ্কা প্রকাশ করেছেন দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
বিশ্বকাপের ম্যাচগুলো যুক্তরাষ্ট্রের ১১টি শহরে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। এই শহরগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিতে যুক্তরাষ্ট্র সরকার বরাদ্দ রেখেছে ৬২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিষয়ক সাম্প্রতিক এক বৈঠকে উঠে এসেছে, এখনো কোনো শহরেই এই অর্থ পৌঁছায়নি। এমনকি অনেক জায়গায় এখনো চূড়ান্ত কোনো নিরাপত্তা পরিকল্পনাও তৈরি হয়নি।
২০২২ সালে কাতারে আয়োজিত বিশ্বকাপে নিরাপত্তা ও সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনায় বিশ্বজুড়ে প্রশংসা কুড়িয়েছিল আয়োজকরা। এবার যুক্তরাষ্ট্রও সামনে দাঁড়িয়ে আছে বিশাল এক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি—শুধু বিশ্বকাপ নয়, ২০২৮ সালের অলিম্পিকও অনুষ্ঠিত হবে সে দেশে। তাই এসব আয়োজনকে সামনে রেখে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে উঠেছে নানা প্রশ্ন।
এর আগে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে কানসাসে সুপার বোল রাগবি টুর্নামেন্ট চলাকালে সন্ত্রাসী হামলায় একজন নিহত ও ২৪ জন আহত হয়েছিলেন। আবার ২০১৩ সালে বোস্টনের ম্যারাথনে ঘটে যায় ভয়াবহ বোমা হামলার ঘটনা।
এসব নজির তুলে ধরেই সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশ্বকাপের মতো বড় আয়োজনে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও বেশি জোরদার করা জরুরি ছিল। সময় গড়ালেও কার্যকর প্রস্তুতির অভাবে উদ্বিগ্ন স্থানীয় প্রশাসন।
কানসাস পুলিশের প্রধান গ্রেভস জানান, আমাদের শহরে ৬টি বিশ্বকাপ ম্যাচ হওয়ার কথা। অথচ আজও আমরা কোনো অর্থ বরাদ্দ পাইনি। প্রস্তুতির জন্য সময় দ্রুত ফুরিয়ে আসছে। এমন কোনো হামলা যদি বিশ্বকাপ চলাকালে ঘটে, তখন দায় কে নেবে?
এদিকে বোস্টনের সাবেক পুলিশ কমিশনার এডওয়ার্ড ডেভিস বলেন, ২০১৩ সালের হামলা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিল, ঝুঁকি সব সময়ই থাকে। বিশ্বকাপের মতো আয়োজনে তা আরও বেড়ে যায়। কিন্তু বর্তমানে প্রস্তুতির ঘাটতি আমাদের চিন্তিত করছে।
শুধু স্থলপথ নয়, আকাশপথেও নিরাপত্তা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। বিশেষ করে ড্রোন অনুপ্রবেশকে বড় হুমকি হিসেবে বিবেচনা করছে কর্তৃপক্ষ। তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের এক রাগবি টুর্নামেন্টে ২,৮০০ অবৈধ ড্রোন অনুপ্রবেশ ঘটেছিল, যেগুলো প্রতিরোধে ব্যর্থ হয়েছিল পুলিশ।
এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্র সরকার ‘ডিফেন্স অ্যাক্ট’ নামে একটি নতুন আইন চালুর পরিকল্পনা করছে। আইনটি পাস হলে পুলিশের হাতে থাকবে ড্রোন প্রতিরোধী প্রযুক্তির ব্যবহারাধিকার।
বিশেষজ্ঞদের মতে, আইন পাস ও বাস্তবায়নের মধ্যকার দীর্ঘ সময় এবং ব্যবস্থাপনাগত জটিলতা এই বিশ্বকাপের আগে সমাধান নাও হতে পারে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বিশ্বকাপ শুধু ক্রীড়া প্রতিযোগিতা নয়, বরং দেশের নিরাপত্তা সক্ষমতা দেখানোর একটি আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্ম। লাখ লাখ দর্শক যখন বিভিন্ন দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আসবেন, তখন নিরাপত্তা নিয়ে নিশ্চয়তা দিতে না পারলে এর প্রভাব পড়বে আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তিতেও। তাই এখনই দ্রুত অর্থ ছাড়, পরিকল্পনা চূড়ান্তকরণ এবং মাঠপর্যায়ে প্রস্তুতির আহ্বান জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ ও নিরাপত্তা কর্মকর্তারা।-পিএনএস
দ্য টাইমস নিউজ বিডি