ফরিদপুর প্রতিনিধি, দ্য টাইমস নিউজ বিডি: ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার ঘোষপুর ইউনিয়নের দৈত্যরকাঠি গ্রামের এনামুল হোসেনের ছেলে মো. রনি হোসেন (৩১)। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। শরীরে তার তীব্র যন্ত্রণা। ওপর থেকে ছোড়া এলোপাতাড়ি গুলিতে তার জীবন তছনছ হয়ে গেছে। মৃত্যুর কাছ থেকে বেঁচে ফেরা রনি হোসেনের শরীরে এখনো মৃত্যুযন্ত্রণা।
একদিকে মাথার ওপর এনজিওর ঋণের বোঝা অন্যদিকে সংসারের অভাব-অনটন। টাকার অভাবে চিকিৎসা নিয়েও দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। দীর্ঘ চার মাসেও মেলেনি সরকারি কোনো সাহায্য-সহায়তা।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, মো. রনি হোসেন এক সন্তানের জনক। তিনি রাজধানীর একটি কনস্ট্রাকশন সাইডে ম্যানেজারের কাজ করতেন। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের শুরু থেকে ছাত্রদের সঙ্গে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন তিনি। গত ৫ আগস্ট দুপুরের দিকে রাজধানীর যমুনা ফিউচার পার্ক এলাকায় হেলিকপ্টার থেকে ছোড়া গুলিতে গুলিবিদ্ধ হন। গুলিতে তার মুখগহ্বর ছেদ করে ঘাড়ের হাড়ের ডিস্কের মধ্যে বিদ্ধ হয়। গুলিতে তার ঠোঁট, সামনের কয়েকটি দাঁত, জিহ্বা, মুখগহ্বরসহ মেরুদণ্ডের হাড়ের ডিস্ক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
মো. রনি হোসেন দ্য টাইমস নিউজ বিডিকে জানান, গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই জ্ঞান হারান তিনি। আন্দোলনকারীরা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে গুলশান ইউনাইটেড হাসপাতালে নিয়ে যান। ওই হাসপাতালেই চলে প্রাথমিক চিকিৎসা। কয়েক ঘণ্টাব্যাপী অস্ত্রোপচার করেও গুলি বের করতে ব্যর্থ হন চিকিৎসকরা। পরে খরচের কারণে ওই হাসপাতাল থেকে ধানমন্ডির পপুলার হাসপাতালে তাকে স্থানান্তর করা হয়।
সেখানে ১৮ দিন চিকিৎসকদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে চিকিৎসাসেবা নেওয়ায় প্রায় ১২ লাখ টাকা ব্যয় মেটাতে গিয়ে পরিবারের সদস্যদের হিমশিম খেতে হয়। এ সময় এক সমন্বয়কের মাধ্যমে শুধু ওষুধের বিল ৩ লাখ ১৮ হাজার টাকা পরিশোধ করে হাসপাতাল থেকে ছাড় পান তারা।
তিনি আরও জানান, সমন্বয়কদের মাধ্যমে সাভার সিআরপি হাসপাতাল ও ইবনেসিনা হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। সর্বশেষ সিআরপিতে কয়েক ঘণ্টা ও ইবনেসিনায় ২ মাস ৭ দিন ডা. আব্দুল্লাহ আল মাহমুদের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা চলে তার। সব মিলিয়ে এখন খুবই বিপদের মধ্যে আছেন।
রনি হোসেনের স্ত্রী মোছাম্মৎ শান্তা ইসলাম দ্য টাইমস নিউজ বিডিকে বলেন, প্রায় চার মাস হতে চললো। আমার স্বামী শরীরে গুলির যন্ত্রণা নিয়ে দিন-রাত ছটফট করে। তীব্র যন্ত্রণায় রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে পারে না। চোখের সামনে তার যন্ত্রণা সহ্য করতে পারি না। সরকারের কাছে দাবি আমার স্বামীর উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হোক।
মো. রনি হোসেনের মা নাজমা বেগম দ্য টাইমস নিউজ বিডিকে বলেন, একদিকে এনজিওর কিস্তির চাপে রাতে ঘুম আসে না। ঘরে এক বছরের নাতির দুধ কেনা, পরিবারের সদস্যদের দু’বেলা দুমুঠো ভাত কিভাবে জুটবে সারাক্ষণ এ চিন্তায় থাকি।
এ ব্যাপারে রনি ইসলামের বাবা মো. এনামুল হোসেন দ্য টাইমস নিউজ বিডিকে বলেন, খবর পেয়ে ঢাকা থেকে সমন্বয়করা দেখতে আসেন। নাম-ঠিকানা লিখে নেন। প্রতিশ্রুতি দেন চিকিৎসাসহ আর্থিক সাহায্য-সহায়তার। ছেলের চিকিৎসার জন্য ধারদেনা করে, মানুষের কাছ থেকে টাকা-পয়সা সাহায্য তুলে ৭ লাখ টাকার মতো খরচ করেছি। এখন আর চিকিৎসা চালাতে পারছি না। ঠিকমতো সংসারই চলছে না।
ঘোষপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ইমরান হোসেন নবাব দ্য টাইমস নিউজ বিডিকে বলেন রনির শারীরিক অবস্থা খারাপ। জানা মতে সরকারি কোনো সহায়তা পাননি। চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন খরার ক্ষমতা নেই। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সাধ্যমতো সাহায্য-সহায়তার চেষ্টা করা হবে।
বোয়ালমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানভির হাসান চৌধুরী দ্য টাইমস নিউজ বিডিকে বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। তার বিষয়ে কেউ কিছু জানাননি। তবে এখন যেহেতু জানতে পারলাম দ্রুত সময়ের মধ্যে তার খোঁজখবর নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাধ্যমতো সহায়তার চেষ্টা করা হবে।
দ্য টাইমস নিউজ বিডি