নিজস্ব প্রতিবেদক,দ্য টাইমস নিউজ বিডি: নারী দিবসের কথা সবাই জানলেও পুরুষ দিবসের বিষয়ে কিন্তু অনেকেই জানেন না। আবারও জানলেও সেটা আয়োজন করে উদযাপন করা হয় না। নারী দিবস নিয়ে যেমন আলোচনা থাকে পুরুষ দিবস নিয়ে ততটা থাকে না। তাই দিবসটি অনেকটা আড়ালেই থেকে যায়।
আজ ১৯ নভেম্বর বিশ্ব পুরুষ দিবস। তবে আর দেরি কেন, আজকে স্মরণ করিয়ে দিতে পারেন আপনার প্রিয় পুরুষ মানুষটিকে, দিতে পারেন কিছু উপহারও।
পুরুষ দিবস পালনে প্রথমে ২৩ ফেব্রুয়ারি দিন ঠিক হয়েছিল। কিন্তু আগে থেকে এ দিনটি ‘রেড আর্মি ও নেভি ডে’র জন্য নির্ধারণ করা ফেলেছিল রাশিয়া। তাই পরে ১৯ নভেম্বর পুরুষ দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ১৯২২ সাল।
বিশ্বব্যাপী লিঙ্গভিত্তিক সমতা, বালক ও পুরুষদের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা। পুরুষ দিবসের উদ্দেশ্য নারী দিবসের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করা নয়। পুরুষের ইতিবাচক ভাবমূর্তি তুলে ধরার প্রধান উপলক্ষ হিসেবে প্রতি বছর দিবসটি পালন করা হয়।
দিবসটির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হিসেবে বেশ কয়েকটি বিষয়ের ওপর জোর দেওয়া হয়। পুরুষ মানেই আপনাকে বাহিরের সব কাজে পারদর্শী হতেই হবে, তা না হলে আপনি পুরুষের তালিকায় পড়বেন না! এই ধরনের চিন্তা বদলানোর সময় চলে এসেছে। মনে রাখবেন ছেলে অথবা মেয়ে উভয়ই যে কোন কাজের বিষয়ে পারদর্শী হতে পারে।
ছেলেরা যদি মন খারাপ করে তাহলে তাকে বেশিরভাগ সময়ই শুনতে হয় যে, মান-অভিমান মেয়েদের জন্মগত অধিকার। এই ধারণা নিয়ে বাঁচলে জীবনটা উপভোগ করতে পারবেন না। তার চেয়ে বরং আপনি যেমন, তেমনই থাকুন, তেমন ভাবেই বাঁচুন। মন খারাপ বা অভিমান হওয়ার সাথে লিঙ্গের কোনো বিষয় নেই।
গত শতকের ষাটের দশকেই পুরুষ দিবস পালনের আহ্বান জানানো হয়েছিল। ১৯৬৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমসের একটি নিবন্ধে বলা হয়, ২৩ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবস হিসেবে পালন করতে আগ্রহী অনেকেই। ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবসের মতো একই ধরনের একটি দিবস পালন করতে চাচ্ছিলেন তারা।
এর পরের দশক থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আলাদাভাবে পুরুষ দিবস পালন শুরু হয়। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ফ্রান্স, কলম্বিয়া, রাশিয়া ও চীনে উদ্যাপন করা হতো দিবসটি। তবে ভিন্ন ভিন্ন এ উদ্যোগ তেমন সাড়া ফেলতে পারেনি। একসময় বন্ধও হয়ে যায়।
ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগোর ওয়েস্ট ইন্ডিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জিরোম টিলাকসিংয়ের উদ্যোগে ১৯৯৯ সালের ১৯ নভেম্বর থেকে শুরু হয় বিশ্ব পুরুষ দিবস উদযাপন শুরু হয়। প্রতি বছর বিশ্বের ৭০টিরও বেশি দেশে দিবসটি পালন করা হয়। পুরুষ দিবস ক্যারিবীয় অঞ্চলে দারুণ সমর্থন পেয়েছিল। ক্যারিবীয় এ উদ্যোগটি এখন সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া, ভারত, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ আফ্রিকা, হাইতি, জ্যামাইকা, হাঙ্গেরি, মাল্টা, ঘানা, মলদোভা, কানাডাসহ বিভিন্ন দেশে উদযাপিত হয়। দিন দিন দিবসটির জনপ্রিয়তা বাড়ছে।
আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবসে পুরুষের মাঝে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যাসহ অন্যান্য স্বাস্থ্য ও সামাজিক সমস্যা নিয়ে সচেতনতা বাড়ানোর চেষ্টা করা হয়। নারী-পুরুষের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়ন বিষয়ক প্রচারণা, নারী-পুরুষ সমতার প্রচার, পুরুষদের মধ্যে ইতিবাচক আদর্শ চরিত্রের গুরুত্ব তুলে ধরা, পুরুষ ও বালকদের নিয়ে গড়ে ওঠা বিভিন্ন সংস্কার ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরি করা, পুরুষ ও বালকদের অর্জন ও অবদানকে উদযাপন করা হয়। তাই আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবস একজন পুরুষকে ভালো মানুষ হওয়ার মূল্যবোধ, চরিত্র এবং দায়িত্বের প্রতি উৎসাহিত করতে পারে।
এ বছর পুরুষ দিবসের প্রতিপাদ্য রাখা হয়েছে ‘জিরো মেল সুইসাইড’।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ৪৫ বছরের কম বয়সী পুরুষের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, রাশিয়াসহ বিশ্বের অনেক দেশে এ ঘটনা ঘটছে। পরিসংখ্যান বলছে, পুরুষের তুলনায় নারীরা বিষণ্নতায় বেশি ভোগেন। কিন্তু পুরুষের আত্মহত্যার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই পুরুষের মাঝে সামাজিক সচেতনতা বাড়াতে ও মানসিক সুস্থতার জন্য পুরুষ দিবস উদযাপন গুরুত্বপূর্ণ।
এটা মনে রাখতে পুরুষ দিবসের উদ্দেশ্য নারী দিবসের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করা নয়। বরং পুরুষের সামাজিক অভিজ্ঞতাকে সবার কাছে তুলে ধরা এই দিবসের উদ্দেশ্য। তাই সচেতনতা বাড়াতে দিবসটি উদযাপন করা যেতে পারে।
দ্য টাইমস নিউজ বিডি